শ্রেয়সী  ( March,2025 )
                         ISSN -2581-4079

                                      শ্রেয়সী  ( March,2025 )
                         ISSN -2581-4079

এই খানে ক্লিক করুন

      গল্প  

*বসন্তের রঙ সাদা*

সন্তু জানা ।

বসন্তের রং লেগেছে লাল পলাশ গাছটির সারা দেহ জুড়ে । চারিদিকে রঙিন আঁকিবুকি আর প্রকৃতির কোলাজ । বাতাস বইছে ফুরফুরে মেজাজে । পাশেই ইউনিভার্সিটি ক্যান্টিন । প্রতিদিনের একঘেয়েমি ভিড়ের চেনা দৃশ্য । একেবারে কোণে একটি টেবিলে একা ঠায় বসে আছে বছর তেইশের এক তরুণ । নাম অসীম । আজকে, এক কাপ গরম কফিতে চুমুক দিতেও যেন ভুলে গিয়েছে সে । সত্যি কি পারুলের ফোনটা আর আসবে না আজ ! সত্যি কি গতকাল তার বিয়েটা হয়েই গিয়েছে !


"স্যার, টোস্ট দিয়ে যাবো ?" , ওয়েটার ছেলেটি নরম করে বলে উঠল । 


অসীমের অন্যমনস্ক চোখের চাউনি অসম্মতি জানালো । ধীরে ধীরে টেবিলের উপর কফির মগ থেকে ধোঁয়া কমে আসছে । তারপর একটা সময় একদম হিমশীতল জলের মতো ঠান্ডা । সকালের আলতো সূর্য এখন অনেকটা ওপরে । কিন্তু, অসীমের চরিত্রের কোনো পট-পরিবর্তন নেই । এদিকে, ঘড়ির কাঁটার গতি রোধ করে সাধ্য কার । সময় যেন প্রাণপণে ছুটছে সামনের দিকে । হঠাৎ ক্যান্টিনের মালিক ইতস্তত হয়ে ছুটে এসে বাঁজখাই গলায় বলে উঠল, "দাদা, অনেক হয়েছে, এবার তো টেবিলটা ছাড়তে হবে না কি ? কিছুই তো নিচ্ছেন না দেখছি ।"


বলতে বলতে হঠাৎ করে ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো --- " আমার যাবার বেলায় পিছু ডাকে, ভোরের আলো গাছের ফাঁকে ফাঁকে......" । অবশেষে, ওপার থেকে পারুলের সেই আদুরে গলা , "আসু, আমি সক্কাল সক্কাল শ্বশুরবাড়ি পৌঁছে গেছি । আর, জানিস, এসেই নতুন বউয়ের হাতে তৈরি গরম গরম কফি সার্ভ করছি । তুই সকালে কফি খেয়েছিস তো ? আসু.......?"


কোন বাক্য নেই । কোন শব্দ নেই । শুধু এক ফোঁটা জল চোখ থেকে সরে গিয়ে জায়গা করে নিল ওই ঠান্ডা কফির অতল সাগরে । ক্যান্টিনের পাশের রঙিন পলাশ গাছ থেকে একটা শুকনো ফুল ঝরে পড়লো অসীমের শরীরে । আবছা চোখে অসীম দেখলো, ফুলটির রঙ সাদা !

দাঁতন, মেদিনীপুর, ৭২১৪২৬ ।

পশ্চিমবঙ্গ ।

ভারত ।।

2 Oct 2024

দান

                                       জয়নাল আবেদিন


শামীম শেখের গতরপাতে জমিতে সোনা ফলে। সকাল থেকে দুপুর গড়িয়ে যায়। লাঙ্গল- গরুতে জমি চষা। বীজ বপন। ধান- পাট-কলাই। শস্য ফলানো, মাথায় ঘাম পায়ে ফেলার পরিশ্রমে।   বাড়িতে শামীম শেখের বিবি খাদিজা। স্বামীর দোসর পরিশ্রমের নিরিখে। সংসারের কাজ, জোড়া গরুর খড় কাটা। গোয়ালসাফাই, তার সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়।   দুই ছেলে একটু বড় হলে বাপের সঙ্গে জমিতে যায়। বাপের কাছে কাজ শেখে। একটু একটু হাত লাগায়।   সারাবছরের ফল- ফসল বিক্রির টাকায় একটু একটু জমিয়ে জমি বেড়েছে কয়েক বিঘা। এখন শামীম শেখের ডাঙা থেকে নেমে এক বন্দে তেরো বিঘা জমি। আরও চার বিঘা রয়েছে খালপাড়ের লাগোয়া।   বয়স বেড়েছে শামিম শেখের। জোয়ান হয়েছে দুই ছেলে। তারাও ঠিক বাপের মতই কর্মঠ। বাপকে আর জমিতে যেতে দেয় না এখন। শামীম শেখ এখন মসজিদ মুখো। শেষ জীবনটা ধর্মের প্রতি টান এসেছে। দান- ধ্যানে বেশ মনোযোগী। অবসর সময়টা ধর্মে- কর্মেই কাটাতে চায়।  পাড়ার শেষ প্রান্তের জবির খানের মেয়ের বিয়ে। এক মন চাল সাহায্য দেবে কথা দেয় শামীম শেখ। কিন্তু বাধ সাধে বিবি, ছেলে দুজন। এভাবে দানে বাধা দেয় বাপকে।  - এভাবে দান ছত্র খুলে দেয়া যাবে না। বড় ছেলের প্রতিবাদ।- কেন রে? অসুবিধের কি ? বাপের প্রশ্ন।- দু-চার কিলো দাও। তাবলে এক মন ? ছোট ছেলের জবাব। গুম খেয়ে যায় শামীম শেখ। এমন পরিস্থিতি শেষ বয়সে বড় ধাক্কা দেয় তাকে। যার সিল তার নোড়া - তারই ভাঙবি দাঁতের গোড়া !      জৈষ্ঠ মাসের প্রথম সপ্তাহে পরপর দুদিন বেশ বৃষ্টি হলোো। চাষীদের তৎপরতা বাড়লো, ধানের বীজ ফেলার।  ফজরের নামাজ শেষে, সকাল সকাল কাঁধে লাঙল নিয়ে গরু জোড়াকে তাড়িয়ে জমিতে গেল শামীম শেখ। বিবির নজরে পড়তে হকচকিয়ে গেল সে। ছুটে গিয়ে ডাকে ছেলেদের।  ছেলেদের আপত্তি কানে দিলে না শামীম শেখ। গরু তাড়িয়ে লাঙ্গল চষতে থাকে দমের সঙ্গে।আবারো যেন চাষের জমিতে পুরনো শক্তি ফিরে পায়। পরপর তিনদিন জমি চষতে থাকে। ঘাস- পাত মেরে বীজ ধান ফেলল জমিতে।  বাড়িতে একটু একা একা সময় কাটায় শামীম শেখ। নামাজ শেষে তসবিহ করে। কাছে আসা মানুষগুলোকে নিয়ে আলোচনা করে। ভরা মরশুমে নিজের হাতে চষা জমিতে, মজুর নিয়ে এসে ধান রোপণ করে। ছেলেরাও তাদের মতো কাজ করে। কোন ক্লান্তি নেই শামীম শেখের শরীরে। দমে তো কোন টান নাই এই বয়সে।    ফসল উঠেছে খামারে। সোনালী ধানে খামার ভরা। ছাড়াই- মাড়াই চলছে সকাল থেকে। কয়েকটা মজুর কাজ করে চলেছে পরপর কয়েকদিন। বস্তা বোঝাই ধান ছেলে দুজন গোলা ভরাচ্ছে। হঠাৎ ই জবির খাঁয়ের দেখা মেলে সামনের রাস্তায়।-- জবির ভাই, শোনো- শোনো । যাও কোথায় ? হাঁক দেয় শামীম শেখ। - বল দাদা ? ডাকলে আমাকে ?-- হ্যাঁ গো, শোনো ভাই । মাফ করে দিও আমাকে, গেল বছর মেয়ের বিয়ের সময় কথা দিয়ে কথা রাখতে পারিনি। আজ এক বস্তা ধান দিচ্ছি। সেদ্ধ শুকনো করে মেয়ে জামাইকে খাওয়াবে।- আমি নিয়ে যাব কি করে দাদা। বিস্ময়ে জবির খাঁন।-- তুমি নিয়ে যাবে কেন গো ? আমার লোক তোমার বাড়িতে দিয়ে আসবে। এই যা তো, এর বাড়িতে এক বস্তা ধান দিয়ে আয়। তুমি এদের সঙ্গে যাও। মুখে একটা তৃপ্তির হাসি শামিম শেখের। ছেলে দুজন তখন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে।


________________________জয়নাল আবেদিনশাঁখ পুকুর মাঝের পাড়াবজ বজ, দক্ষিণ ২৪ পরগণাকোলকাতা-৭০০১৩৭মোবাইল-৯০০৭৯৫০০১৬

X